রহমত নিউজ 07 July, 2025 07:54 PM
সম্প্রতি তালেবানের নেতৃত্বাধীন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। তারপর অন্য দেশগুলোকেও স্বীকৃতি প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় আফগান নেতারা।
তারই প্রেক্ষিতে এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের কাছে আফগান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাল ক্বওমী তরুণ আলেমদের নিয়ে গঠিত বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন “ইন্তিফাদা”।
রোববার (৬ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে দেওয়ার ‘খোলা চিঠি’ গণমাধ্যমে পাঠায় সংগঠনটি।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ‘খোলা চিঠি’ হুবহু :
২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলিম বিশ্বের কোনো একটা দেশ এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি। এমন এক পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলো একটা অমুসলিম রাষ্ট্র। রাশিয়া একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়ন। বিংশ শতাব্দীর পরাশক্তি। ৩রা জুলাই, ২০২৫ তারিখে আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যা তালেবান সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক বিজয়।
এই যে রাশিয়ার স্বীকৃতি প্রদান, এটি সত্যিই মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি চিন্তার বিষয়। কারণ আফগান তালেবানের প্রথম প্রজন্ম এই পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। নাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের ভিত। ভেঙে খানখান করে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। শেষ পর্যন্ত তারাও স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হলো৷ তাও সর্বপ্রথম।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপটি শুধু যে দীর্ঘদিনের পাপের একটি প্রায়শ্চিত্ত, এমনটা নয় কিন্তু। বরং এই স্বীকৃতি অনিবার্য একটা ‘সভ্যতার সংঘাত’ থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্ত করেছে পৃথিবীকে৷ শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই স্বীকৃতি।
স্বীকৃতি প্রদানের দৌড়ে মুসলিম বিশ্ব সত্যি সত্যিই পিছিয়ে পড়েছে। সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদানের গৌরব অর্জন করেছে রাশিয়া। অনেক দেশ তো তালেবান নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আফগানিস্তানে তাদের নিজস্ব দূতাবাসও চালু রেখেছে। যা কার্যত একটি অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতিরই নামান্তর।
পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে সদ্যই চীন, তুরস্ক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ অনেকগুলো দেশ স্বীকৃতি প্রদান করতে যাচ্ছে৷ এসব দেশ স্বীকৃতি না দিলেও উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক, কূটনৈতিক তৎপরতা ও সুসম্পর্ক দৃশ্যমান। আমাদের বিশ্বাস দ্রুততম সময়ের ভেতরে তারাও স্বীকৃতি প্রদান করবে। একে একে সবগুলো মুসলিম রাষ্ট্রও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করবে ইনশাআল্লাহ।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আমরা বিশ্বাস করি, প্রথম কোনো মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই ঐতিহাসিক গৌরব অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মধ্যে রয়েছে এক গভীর আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বন্ধন। মুসলিম বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উভয় দেশের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে একই বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত।
অর্থনৈতিকভাবে ‘স্বীকৃতি’ বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারে এবং আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি কোন ক্যারিশমায় এত দ্রুত পুনর্গঠিত হচ্ছে সেই কৌশলও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে। মুসলিম উম্মাহর ‘দুটি অর্গান’ একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ালে উভয়েরই উপকার হবে নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।
রাজনৈতিকভাবে এই ‘স্বীকৃতি’ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাস্তবিক অর্থে, মানবিক সহায়তা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ আফগানিস্তানের জনগণের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই মেলবন্ধন ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে জীবনভর লিপিবদ্ধ থাকবে।
আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে আপনি ব্যক্তি হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করতে পারেন। ইতোমধ্যে আপনার ঝুলিতে শোভা পাচ্ছে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার। আর এই উদ্যোগও নিঃসন্দেহে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই পদক্ষেপ কেবল একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হবে না, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আমরা আপনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, আফগানিস্তানকে স্বাধীন শরিয়াহ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ থেকে স্বীকৃতি চাই।
আমরা আপনার সুবিবেচনা ও দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করি।