মূল পাতা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পেন্টাগনকে ট্রাম্পের নির্দেশ
রহমত নিউজ 31 October, 2025 12:37 PM
আমেরিকার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ বলেন, ‘অন্যান্য দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে। তাই আমি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি যেন আমেরিকার সমানভাবে পরীক্ষা শুরু করে। এ প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করা হবে।’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু অস্ত্রের দিক থেকে রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন তৃতীয়। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আমেরিকার সমকক্ষ হয়ে উঠবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা সরাসরি রাশিয়া ও চীনের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া বেশ কয়েকটি নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ২১ অক্টোবর তারা একটি পারমাণবিকচালিত ক্রুজ মিসাইল, ২২ অক্টোবর পারমাণবিক প্রস্তুতি মহড়া এবং ২৮ অক্টোবর একটি নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত টর্পেডোর পরীক্ষা করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, এসব পরীক্ষায় কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন যে অন্য দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে, তবে আমরা জানতাম না কেউ এমন পরীক্ষা করছে।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকাকে পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত রাখার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি মানার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এমন পদক্ষেপ বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর তথ্যমতে, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ২০২০ সালের ৩০০ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৬০০ হয়েছে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার পর আমেরিকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নেভাদার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ডিনা টাইটাস এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘আমি এই বিপজ্জনক উদ্যোগ বন্ধে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব আনব।’
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন-এর পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেন, ‘১৯৯২ সালের পর আমেরিকার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা পুনরায় চালুর কোনো প্রযুক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রয়োজন নেই। ট্রাম্প ভুল তথ্য জানেন এবং তিনি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।’
তিনি সতর্ক করেন, এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোকে নতুন করে পরীক্ষা চালাতে উৎসাহিত করতে পারে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) বিপর্যস্ত করতে পারে।
ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন, অন্যরা যখন পরীক্ষা করছে, তখন আমরাও করব। পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ভাণ্ডার নিরাপদ ও সুরক্ষিত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, আমেরিকার এ পদক্ষেপে নতুন করে বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে এবং স্নায়ু যুদ্ধ-পরবর্তী পারমাণবিক স্থিতাবস্থা ভেঙে যেতে পারে।