মূল পাতা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশে অনৈক্য ও আরও যেসব বিষয় নিয়ে কথা বললেন মাহাথির মুহাম্মাদ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 25 June, 2025 01:44 PM
মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ড. মাহাথির মুহাম্মাদ আগামী মাসেই শততম জন্মবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছেন। আর এই উপলক্ষ্যে ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইটিভিকে এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি। সেখানে উঠে এসছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাজের প্রশংসা করলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তরণ পর্ব নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মাদ।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় সেই ঐক্য তিনি আর বাংলাদেশে দেখছেন না।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মাহাথির। কিন্তু বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করার যে দাবি ইউনূস জানিয়ে আসছেন, তার তেমন কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
গতবছর অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে মাহাথিরের মন্তব্য: তিনি একজন ‘বড় মাপের মানুষ’।
মাহাথির বলেন, তিনি যা করেছেন, দরিদ্রদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেজন্য নোবেল পুরস্কার তার প্রাপ্য ছিল। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি, তিনি কেবল দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
ইউনূসের প্রশংসা করলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ শেখ হাসিনাকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ ছিল, কিন্তু কী ধরনের সরকার তারা চায় সে বিষয়ে ঐক্য নেই। প্রত্যেকে চায় তার নিজের মতামতই দেশের সবাই মেনে নিক। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন সেই লোকজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে, যারা আগে ঐক্যবদ্ধ ছিল।
সম্প্রতি জাপানে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা হয় মাহাথির মুহাম্মদের। তবে সেখানে বাংলাদেশের নেতাকে কোনো পরামর্শ দেননি বলে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য।
ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি তার (ইউনূস) কথা শুনেছি। আমি জানি সে সমস্যায় আছে। কিন্তু বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, তা বলার মত যোগ্যতা আমি মনে করি আমার নেই।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যপদে দেখতে চান। কিন্তু সেই সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী নন মাহাথির।
সমস্যাটা কোথায় জানতে চাইলে তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, সমস্যাটা ‘ভৌগোলিক’।
জাপানে মাহাথিরের সঙ্গে ইউনূসের সাক্ষাতের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিসের কর্মীদের পক্ষ এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল যে, আসিয়ানে যোগ দিতে বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়ে মাহাথিরের সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সাক্ষাৎকারে তার ভিন্ন মনোভাবের ইংগিত মেলে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বলতে যে ভৌগোলিক সীমা এখন বোঝায়, বাংলাদেশ তা থেকে অনেক দূরে। আমাদের তো একটা ভৌগলিক সীমা মেনে চলতে হবে, না হলে আসিয়ান তো দ্বিতীয় জাতিসংঘে পরিণত হবে।
তবে বাংলাদেশ আসিয়ান প্লাস ফরম্যাটে ‘ডায়ালগ পার্টনার’ কিংবা ‘অবজারভার স্ট্যাটাসে’ আসতে পারে মত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জাপান, ব্রিটেন, আমেরিকার সঙ্গেও তো কথা বলি, বাংলাদেশের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব।”
বাংলাদেশ যখন আগামী বছর নতুন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, তখন ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিতর্কিত শাসনামলের কথা বিবেচনায় নিলে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত কি না—এ প্রশ্নে মাহাথির উত্তর দেন দার্শনিক ভঙ্গিতে।
তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রের একটা সমস্যা। মানুষ সবসময় সেরা লোকটাকেই বেছে নেয় না; কখনও কখনও ভুল লোককেও বেছে নেয়। যদি বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাভাবনা করে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি মনে করি, তারা একটা ভালো সরকার বেছে নিতে পারবে।
রোহিঙ্গা সংকটে মালয়েশিয়ার অবস্থান নিয়েও কথা বলেন মাহাথির। রাখাইনে নিপীড়িত সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি জানালেও তিনি বলেন, মালয়েশিয়া যথেষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের (এর বেশি) সক্ষমতা নেই। আমরা মিয়ানমারকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু সফল হইনি।
গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া। তবে মাহাথির বলছেন, এখন অন্য দেশগুলোর এগিয়ে আসার সময়। আমাদের এখানে অনেক রোহিঙ্গা আছে আগে থেকেই। শুধু মালয়েশিয়া নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, এমনকি মিয়ানমারের পশ্চিম পাশের অন্য দেশগুলোরও সহায়তা করা উচিত। এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
মাহাথিরকে যখন প্রশ্ন করা হলো, বাংলাদেশ যেখানে এরইমধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, তখন কেন বাংলাদেশকে আরো দায়িত্ব নিতে হবে?
তার সরল উত্তর, কারণ বাংলাদেশ মিয়ানমারের পাশে। স্বাভাবিকভাবে আপনি কাছের দেশে যাবেন। আপনি তো লন্ডনে যাবেন না।