রহমত নিউজ 19 July, 2025 07:54 PM
ঢাকায় মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর মানববন্ধন করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম ঢাকায় মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
সেই মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেছিলেন, পশ্চিমাদের দোসর ও পদলেহী জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ফিলিস্তিন, আফগানিস্থান, কাশ্মীর, সিরিয়া, লেবানন, আরাকানসহ নির্যাতিত মুসলিম এলাকাগুলোতে কোন কার্যকর ভুমিকাই রাখতে পারেনি। ফিলিস্তিনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যাকারী, লক্ষাধিক মানুষকে আহতকারী, লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনীকে বাস্তুচ্যুত করার জন্য দায়ী ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা কিছুই করতে পারেনি। মানবাধিকারের নামে এই প্রতিষ্ঠানটি এলজিবিটিকিউআই তথা সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার, বিকৃত যৌনতার মত অশ্লীল ও জঘন্য বিষয় ছড়িয়ে দেয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। শ্রীলংকায় দশ বছর চেষ্টা করেও এরা কোন অফিস স্থাপন করতে পারেনি। মাত্র ১৬-১৭টি দেশে অফিস স্থাপন করা এই প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করার কোন প্রয়োজন নেই।
নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপিত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি করে বলেন, মানবাধিকার পরিষদের অফিস বাংলাদেশে স্থাপিত হলে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে নাক গলাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে ফেলার যে দীর্ঘমেয়াদী বিদেশী ষড়যন্ত্র চলমান তার পক্ষে যাবে তাদের তৎপরতা। মানবাধিকার রক্ষার নামে তারা দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে নাক গলাবে।
মানবাধিকার পরিষদের তৎপরতা ইসলামী মূল্যবোধের উপরও আঘাত হানবে দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, নারী-পুরুষের সমতা বিধানের নামে তারা বাংলাদেশে বলবৎ ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে তারা পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাবে। সার্বজনীন যৌন শিক্ষার নামে জাতিসংঘ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবাধ যৌনাচার, জিনা-ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করার অপচেষ্টা চালাবে যা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না।
নেতৃবৃন্দ মানবাধিকার পরিষদের অফিস স্থাপন করার বিষয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের দেয়া পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, গণমাধ্যম মারফত আমরা জেনেছিলাম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় বাংলাদেশে এখনই হচ্ছে না। কিন্তু ২৯ অক্টোবর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা হুটহাট করে সাংবাদিকদের সামনে বলে দিলেন যে, বাংলাদেশ শীঘ্রই মানবাধিকার পরিষদের অফিস খুলবে। তার ঠিক পরের দিন ৩০ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বললেন, মানবাধিকার পরিষদের অফিস এখনই খোলা হবে কি হবে না সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পরস্পরবিরোধী এসব বক্তব্য প্রমাণ করে সরকারের উপদেষ্টারা দেশ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অথবা তারা পরস্পরবিরোধী বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত রেখে গোপনে সংস্থাটির অফিস স্থাপনের কাজটি সেরে ফেলতে চাচ্ছেন। এ ধরনের কিছু হলে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ। কোন ভাবেই এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী কোন প্রতিষ্ঠানের অফিস বাংলাদেশে খুলতে দিবে না এদেশের জনগণ।
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোফাচ্ছির হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন তৎকালীন মহাসচিব ও বর্তমান আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেছিলেন, সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী সুলতান মহিউদ্দীন।
আরও উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত আন্দোলনের দাওয়াত ও তাবলীগ বিষয়ক সম্পাদক এবং কামরাঙ্গীরচর থানা আমীর মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম জামালী, মহানগর সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানা আমীর মুফতী মাহফুজুর রহমান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা জাফর আহমাদ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতী রুহুল আমীন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সুমন, শ্রম সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুর রব দফতর সম্পাদক মাওলানা ইকরাম ইলাহী, পল্টন থানা আহবায়ক মাওলানা আবুল হাসানাত প্রমূখ।