রহমত নিউজ 14 September, 2025 12:40 PM
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, “শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোত থেকেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে ঘোষিত “জুলাই ঘোষণাপত্রে” শাপলা গণহত্যার উল্লেখ না থাকায় এর ঐতিহাসিক দায় ড. ইউনুস সাহেব এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উভয়কেই আজীবন বহন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এটি কেবল একটি ঘোষণাপত্র নয়; কোটি মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আমরা দাবি করি—সনদটি অবিলম্বে ঘোষণা ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হোক এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।”
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ৫ দফা দাবি পেশ করেন মাওলানা মানুল হক। এগুলো মধ্যে রয়েছে, জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন, আওয়ামী লীগের দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতের এদেশীয় এজেন্ট—জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে PR পদ্ধতি বাস্তবায়ন।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমাদের এই দাবিগুলো কেবল রাজনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য নয়; এগুলো দেশের জনগণের অধিকার এবং ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা চাই জনগণ যেন নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।”
তিনি বলেন, “পাঁচ দফা দাবি দেশের ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা আশা করি, সরকার জনগণের এ দাবিগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং এগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবে। এই পাঁচ দফা বাস্তবায়নে আজকের সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি হবে—দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, এবং ২৪-এর বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আন্দোলনের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল হলো এদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের এজেন্ট এবং আওয়ামী লীগের দোসর। এরা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই গণমাধ্যমে ভারতের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অনীহার কথা জানিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছর এরা ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে স্বৈরাচারী হাসিনার সঙ্গ দিয়েছে। খুন, গুম, দুর্নীতিতে নিজেদের শামিল রেখেছে। এখন আবার এদের ঘাড়ে ভর করে পলাতক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বার্থে এই দলটিকে রাজনৈতিক মাঠে রাখা যৌক্তিক নয়। আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি—জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন মানেই ক্ষমতার প্রহসন। সরকারকে নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ ও স্বক্রিয় রাখতে হবে এবং সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে একটি দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটি লেভেল প্লেইং ফিল্ডকে নস্যাৎ করতে পারে। আমরা মনে করি—যা হওয়ার হয়েছে; আগামী দিনের সরকারের কোনো কার্যক্রমে যেন কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ না পায়।”
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের অভ্যুত্থানে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত গণহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায়। এ হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য কারিগর, পরিকল্পনাকারী ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে এবং জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে এ গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা অপরিহার্য।”
PR পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এককক্ষ সংসদ ব্যবস্থা ক্ষমতার একচেটিয়া আধিপত্য সৃষ্টি করে। এজন্য সংসদে উচ্চকক্ষ দরকার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এ ব্যাপারে সব দলই একমত পোষণ করেছে।
সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি—বিদ্যমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটে না। এজন্য আমরা পূর্বেই সংসদের নিম্নকক্ষে MMP (মিক্সড-PR) এবং উচ্চকক্ষে PR পদ্ধতিতে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ঐকমত্য কমিশনে আমরা লক্ষ্য করেছি, এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। মতভিন্নতা কমানোর জন্য নিম্নকক্ষে MMP বাস্তবায়নের দাবি আপাতত ছাড় দিচ্ছি। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় নিম্নকক্ষ গঠিত হতে পারে। কিন্তু উচ্চকক্ষ কোনোভাবেই PR ছাড়া গঠন করা যাবে না। PR পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সংসদীয় রাজনীতিতে কার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়বে, জনমতের মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে।”
এ সময় দাবি আদায়ে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের আমীর।
কর্মসূচিসমূহ :
১। ১৮ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল।
২। ১৯ সেপ্টেম্বর, সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল।
৩। ২৬ সেপ্টেম্বর, দেশব্যাপী সকল জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।